আধখোলা চোখের জলে ভাসা দুঃখ, ঘৃণা এবং অনুশোচনায় ভরা মুখটার সাথে সবকিছু স্পন্দনহীন হয়ে যাওয়ার আগে তার যেন মনে হল আর একটা ভয়ংকর দানব তার একমাত্র আদুরে সুন্দরী কন্যার বক্ষস্থল থেকে তার রক্তাক্ত হৃদয়টা ছিঁড়ে বার করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।
Category: Stories
This category includes all stories written by me in various languages.
সর্বনাশের এক রাত
সুদূরে অস্তমিত সূর্যের হারিয়ে যাওয়া উত্তাপের মতো এইক্ষনে সন্ধ্যার হারিয়ে যাওয়া মনোবলের সাথে তার শরীরটা শ্লথ হয়ে এল। টিভির ফিসফিসানি আওয়াজ, রত্নাকরের কামাসক্ত আড়ষ্ট কণ্ঠস্বর, বাইরে পাখীদের বাসায় ফেরার কলরব – সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গিয়ে লাচার রাইমনির করুণ কণ্ঠস্বরে রূপান্তরিত হয়ে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়ে সন্ধ্যার কান দিয়ে মস্তিষ্কে আর তা থেকে হৃদয়ে গিয়ে কেমন যেন এক অব্যক্ত ব্যথার উদ্রেক করতে লাগল।
সর্বনাশের এক রাত
উত্তপ্ত দুপুরের মাদকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে সন্ধ্যার পরিচর্যা হীন সৌন্দর্যকে চক্ষু দ্বারা অনধিকার সম্ভোগ করে নীচুস্বরে ভূমিকা করল সে, “কেন তুই এত খাটিসরে? কখনো একটু আরামও করে নে এক কোণে। আমিও তোর সাথে – ”
সর্বনাশের এক রাত
বাড়িতে খাট ধরা অপাহিজ অসুস্থ বাপ যার ওষুধের খরচা সামলানো হয়েছে ভার। বিধবা দিদি কাজে যায় – তাও ইট ভাঁটাতে। মা নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসন-কাপড় ধোয়। তবুও ছেলে যেন শহর না যায়। কেন না শহর গিয়ে নাকি কেউ ফিরে আসে না। ওখানেই নাকি চিরবাসিন্দা হয়ে থেকে যায়।
সর্বনাশের এক রাত
এমতাবস্থায় এক কোনে বাঁশের থেকে ঝুলে থাকা পুরোনো ধুতি জামার নীচে আধভাঙ্গা চৌকিতে রাখা কৃষ্ণ ভগবানের এক ছোট মূর্তির মুখের অনবদ্য হাসি অবশ্যম্ভাবী নিয়তি আর বিধানের পরিপুষ্টি করে যেন হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ গীতার শতবার আওড়ানো না-বুঝ সেই পংক্তিটি বলছে, “ কর্মন্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।”(কর্মেই তোমার অধিকার, ফলে কক্ষনও নয়)
সর্বনাশের এক রাত
ভাঁটার মালিক আর চিমনি যেন এক বলে মনে হল তার কাছে। স্বার্থপর, শোষণকারী, অত্যাচারী আরও কতকিছু যার পরিস্ফুটন তার শব্দকোষে এই মুহুর্তে এলো না, বোধহয় বারো বছর আগে কালের ঘূর্ণিপাকে পড়ে সপ্তম শ্রেণীর চৌকাঠ পেরোতে না পারার জন্যে।
মুম্বাই জিন্দাবাদ
“আমি কি নিজেকে তোমার কাছে সমর্পণ করতে পারিনা? আমি আশ্রয় চাই। জীবন সংঘর্ষে হেরে যাওয়া আমার শরীর ও মন আশ্রয় চায়। তোমার আশ্রয়।”
পরাবর্তন – the Reflection
তারপর সমস্ত চেতনা শক্তির বিলোপ হওয়ার সাথে সাথে সর্ব শরীর যন্ত্রণাহীন হয়ে শিথিল হয়ে যাওয়ার আগে তার মনে হয়েছিল – তার কৃত্য উচিত অনুচিত সব কিছুই প্রায় সঠিকভাবে পরাবর্তিত হয়েছে তার জীবনে। কিন্তু হয়নি শুধু সেই করুণ মুখটার ভাসা ভাসা চোখদুটো থেকে ছড়িয়ে পড়া অব্যক্ত প্রাঞ্জল ভালোবাসার পরাবর্তন।
গুরু চণ্ডাল
“যাহা কাল ঘটিয়াছে কিম্বা তৎপূর্বে কখনও ঘটিয়াছিল তাহা সবই অতীত। তাহা কখনও পরিবর্তিত হইতে পারে না। কিন্তু যাহা তুমি আজ করিতেছ তাহা বর্তমান – তাহার পরিবর্তন তুমি করিতে পার। তাহাতে সুযোগ্য পরিবর্তন তোমার নিমিত্ত নির্ধারিত ভবিষ্যতকেও পরিবর্তিত করিয়া দিতে সক্ষম হইবে। আর এইরূপ হইলে তুমি তোমার ভাগ্য নিজেই গড়িতে পারিবে।”