মহানগর মানেই হাজার হাজার বাইরের লোকের আশ্রয়স্থল – রুজি-রোজগার এবং ঘর-বাঁধা দুটো উদ্দেশ্যই তাদের প্রায় সফল হয়ে যায় যারা মাটি কামড়ে নাছোড়বান্দা হয়ে পড়ে থাকে। আর এই ব্যাপারে মুম্বাই হল ভারতের সব মহানগরের অন্যতম। যদিও ৫০০ বছর আগে পর্তুগালীদের দেওয়া নাম ‘বম বাহিয়া’ (ভালো উপকূল) প্রায় ১০০ বছর পরে ইংরেজদের দ্বারা অপভ্রংশিত হয়ে ‘বম্বে’ এবং ভারতীয়দের দ্বারা ‘বম্বাই’ কিম্বা ‘বোম্বাই’ হয়ে গেছিল, ১৯৯৫ সালে বর্তমান এই মহানগরের এক প্রান্তে ‘মেরিন লাইন্স’ ষ্টেশনের কাছে অবস্থিত মুম্বা’দেবীর মন্দির থেকেই এর নতুন নামকরণ হয়েছে ‘মুম্বাই’। আর এই ‘মুম্বা’দেবী হল পর্তুগালীদের আসার আগে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরা মূল বাসিন্দা মৎস্যজীবিদের অতি প্রসিদ্ধা দেবী। এই মুম্বাদেবীর নাম নিয়ে বহুপ্রচলিত এক প্রবাদ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে :- এই নগরকে ভালবেসে নিষ্ঠার সাথে যারা সংঘর্ষ করে তাদের মুম্বাদেবী প্রতিষ্ঠিত করে দেয়। অন্যদের হয় ‘খেদিয়ে বিদেয়’।
এই মহানগরে প্রতিদিন ঢুকে আসা অজস্র লোকেদের বেশীর ভাগেরই প্রত্যক্ষ কিম্বা পরোক্ষ ভাবে চলচ্চিত্রের অর্থাৎ সোজা কথায় সিনেমার সাথে জুড়ে থাকাই উদ্দেশ্য। এইরকম উদ্দেশ্য নিয়ে আসা চারটি চরিত্রের জীবনের কিছু ঘটনাবলীর অতি সংক্ষিপ্ত বর্ণন আমার এই কাহিনী।
মুখ্য পাত্রের কথা এলে আমি একটু বিব্রত হয়ে যাই। এ না ও, না ও? সবাই নিজের নিজের জায়গায় মুখ্য; গৌণ তো তাদের কেউ হতেই পারে না।
১৯৭৬ এর নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার বেশ কিছু পরে প্রাইমারী স্কুল থেকে ইংরেজিকে বিদেয় দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাস্তরকে ডগা দেখানোরও অনেক পরে সেই শিক্ষার অধীনে ষষ্ঠ শ্রেণীর অন্তিম ভাগে বহুকষ্টে অক্ষর জুড়ে জুড়ে আর ছাপানো ছবির থেকে ধারণা নিয়ে ‘দিস ইজ এ ক্যাট’ পড়তে পেরে সপ্তম শ্রেণীর চৌকাঠে মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া উত্তম মেধাযুক্ত এবং আমাদের উচ্চমন্য এক বাঙ্গালী ছেলে হাওড়া সাব-আর্বানের বাগনান থেকে পালিয়ে এসে মুম্বাইয়ের কোন চায়ের দোকানে কাপ-প্লেট ধোয়ার কাজে জুটে গিয়েছিল পাক্কা পনেরো বছর আগে। একে বাঙ্গালী তার ওপর মাথায় মাথায় সিক্স পাস ব্রাহ্মন – সৌমেন ভট্টাচার্য – তা বাবা, চায়ের বাসনকোসন কি আর তার জন্যে? মোটেও নয়।
নিষ্ঠা ছিল। শহরটাকে ভালও বেসে ফেলেছিল যা নাকি প্রায় শত প্রতিশত বাঙালীদের ক্ষেত্রে যেন সম্পূর্ণ ধর্মবিরুদ্ধ কার্য। তারা সারা জীবন বাংলার বাইরের কোন শহরে কাটিয়ে সেই শহরকে ভালবেসেছে এমনটা আমি এ যাবৎ প্রায় পঁয়ত্রিশ বছরেরও বেশী প্রবাসী বাঙ্গালী হয়ে কখনও দেখিনি।
যাই হোক – সৌমেন এখন এক অটোরিকশা চালক। বলা বাহুল্য রিকশাটা ওর নিজেরই। স্বাভাবিকভাবে উপজ ফিল্ম অভিনেতা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেখতে শুনতে খুব একটা ভালো না হওয়ার জন্যে বোধহয় দীর্ঘ সংগ্রামের পরে কেবলমাত্র ‘বি’-গ্রেড এক্সট্রার কয়েকটা কাজ জুটাতে সমর্থ হয়েছিল সে। মাঝে মধ্যেই বাঙ্গালিপনার তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়ে বড় হয়ে ওঠা আর একুশ বছর বয়েস পর্যন্ত নিখোঁজ এই সৌমেন আজ সাতাশ বছরের নিষ্ঠাবান এক অটোরিকশা চালক – যে ছোট ভাড়াও খাটে, রাত ডিউটিও করে আর কারোর কোন ভুলে যাওয়া মূল্যবান বস্তু ফেরৎও দেয়। আমার মতে এই হল মুখ্য চরিত্র।
সীমা – পুরো এবং আসল নাম সিমরনজিত কৌর বালিয়া – পাঞ্জাব থেকে আসা ছাব্বিশ বর্ষীয়া এই সুন্দরীটি চার বছর আগে কেবলমাত্র নায়িকা হওয়ার জন্যেই মুম্বাই এসেছিল – কোন পার্শ্ব অভিনেত্রী হওয়ার জন্যে নয়। প্রথম যেদিন সেকেন্ড ক্লাস স্লিপার কোচ থেকে সে নেমেছিল সেদিন সে বিদ্যা বালনের থেকে কোনও অংশে নিজেকে কম ভাবেনি। আর বোধহয় এই শহরের কথিত নিয়ম অনুযায়ী শেয়ারিং ফ্ল্যাটে থেকে অন্য কোন কিছু হাতড়ে পাওয়ার আগে সে একটা ‘সুবোধ’ বয়-ফ্রেন্ড হাতাতে পেরেছিল যার থেকে অতি অল্প সময় পরে চোখ খুলে যাওয়াতে ব্রেক-আপও হয়ে গিয়েছিল।
মুম্বাইয়ের ফিল্মি দুনিয়ার একটা সত্য এটাও যে এখানে ছোট বড় অভিনেতা-অভিনেত্রী, ড্যান্সার, রাইটার এবং অন্য অনেক কর্মীর প্রায় আশি শতাংশেরও বেশী পাঞ্জাব থেকে আসা। তা সে কাপুর হোক বা খান্না, টন্ডন হোক বা চোপড়া, পদবী থাকুক বা না থাকুক।
তিরিশ অতিক্রান্ত বান্টী উরফ বলবীর শিং গরচা’ও বছর কয়েক আগে মুম্বাই এসে বিশিষ্ট অভিনেতা হওয়ার অপরিসীম প্রয়াস করেও কিছু করে উঠতে না পেরে নিষ্ঠা এবং সততা বিসর্জন দিয়ে অতি ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করার জন্যে বিভিন্ন নিম্নমানের(সি-গ্রেড) কাস্টিং এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ করে এর ওর পকেট খালি করিয়ে কালাতিপাত করে চলেছিল। নিজেকে কখনও শায়ের লুধিয়ানবির দূর সম্পর্কের আত্মীয় আবার কখনও অক্ষয় কুমার এবং সান্নি দেওলকে নিজের মায়ের দূর সম্পর্কের বোনের দেওরের শ্বশুর বাড়ীর সম্পর্কের সাথে জুড়ে দেওয়া ছাড়া এই অসফল, অবিখ্যাত অভিনেতা মহোদয়ের একটা বিশেষ নিয়ম ধর্ম ছিল যা সে প্রতিদিন সকালে বেশ দেরীতে উঠে বিছানায় শুয়ে-শুয়েই পালন করতো। আর তা হল ওই দিনের রাশিফল টিভিতে দেখা। এখনকার মতো গোণা-গুণতিহীন জ্যোতিষ চ্যানেল তখন ছিল না বটে কিন্তু যে কটা পেত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখত এবং তত্র কথিত উপায়গুলো প্রযোজ্য করার চেষ্টাও করতো – তবে সেটা শুধু মহিলা সম্পর্কের ক্ষেত্রে। বাকী জায়গায় নিজের অসৎ ছাপ জটিল বুদ্ধিই তার কাছে ছিল সর্বোৎকৃষ্ট। আর তাই নিয়ে সে এখন গোটা তিনেক কাস্টিং এজেন্সির দালালিও করে। চতুর্থ চরিত্রটি মুখ্যত এই বান্টীর সাথেই যুক্ত এবং ক্রমশ প্রকাশ্য।
অতঃপর কাহিনী অতি সংক্ষিপ্ত এবং সরল।
পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক প্রচলিত দেবী মহাকালী এবং মহারাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রচলিত দেব ‘গণপতি বাপ্পা (গনেশ)’কে প্রণাম করে অভ্যেস মতো সৌমেন সেদিন অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল একটু দেরীতে। রাতে তার ছিল একটা শুটিং। না – কোন সংলাপ-টংলাপ ছিল না। শুধু দিল্লী না কোন্ শহরের কোন এক রাস্তায় গভীর রাতে নায়িকা অটোরিকশা চাইছে কিন্তু কেউ দাঁড়ায় না। এই সিনটা মুম্বাইয়ের ফিল্ম সিটিতেই শুট হছছিল। এইরকম বিপরীত চরিত্র পছন্দ না হয়া সত্ত্বেও রাত আটটা নাগাদ নাম্বার প্লেট না বদলেই দু’বার অটোরিকশা চালিয়েছিল সৌমেন। তারপর দশটাতে ডিনার ব্রেকে ভরপেট মাংস রুটি খেয়ে বসে বসে ঝিমোচ্ছিল। আর একবার শট নেবে বলে রাত দুটো বাজিয়ে বলেছিল ‘হয়ে গেছে’। নগদ পেমেন্ট হাজার টাকা – পাঁচশো অটোরিকশার আর পাঁচশো জুনিয়ার আর্টিস্টের দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। কেন যে ওরা এরকম করে তা সৌমেনের মাথায় ঢোকে না। তবে জুনিয়ার আর্টিস্টের কার্ড তার আছে তাই সখপূর্তি আর আয় দুটোই হয়ে যায়।
চার-বাংলা’তে নিজের বস্তির মোড়টা পেরিয়ে বড় রাস্তাতে আসতেই সীমা হাত দেখাল। সৌমেন কখনো কাউকে না বলে না। ব্রেক কষতেই সীমা উঠে বসে বলল, “লিংক রোড।”
মিটার ডাউন করে সৌমেন চলতে আরম্ভ করতেই সীমা নিজের মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখে বলল, “একটু তাড়াতাড়ি চলো।”
সৌমেনের অপরিবর্তিত গতি এবং লুকিং গ্লাসে তার নিশ্চিন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে দ্বিতীয়বার ‘তাড়াতাড়ি’ কথাটা বলতেই সৌমেন নিজগুণ প্রকট করে বলে উঠল, “তা ম্যাডাম, এত তাড়াতাড়ি যখন ছিল, একটু আগে বেরোতে পারতেন। রিকশাওয়ালারা কি রেসের ঘোড়া? একটা চাবুক মেরে বললেই – ”
পাঞ্জাবীরা বাঙালীদের থেকে কোন অংশে কম নয়। ‘ঘাট হয়েছে’ ইত্যাদি বলে সীমা চুপ হয়ে যেতেই মাথা ঝাঁকিয়ে সৌমেন গাড়ীর গতি সহসা এমন বাড়িয়ে দিল যেন এই বুঝি পুলিস পড়ে পেছনে। যাইহোক, গন্তব্যস্থলে পৌঁছুতেই সীমা নেমে ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে দেখল পার্সটা সে ভুলে এসেছে। জোঁকের মুখে যেন নুন পড়ল। ‘ভাইয়া’, ‘ভাইসাহেব’, ‘তুম’, ‘আপ’ নানারকম ভেজাল-মেশাল এবং বাড়ী গিয়ে পয়সা চুকানোর শপথ নিয়ে কাকুতি মিনতি করার পর সৌমেন একটু নরম হয়ে নিজের জুনিয়ার আর্টিস্টের কার্ডটা দেখাতেই সীমার সমস্ত ভাবাবেগ প্রথমে বিস্ময়ে এবং পরমুহূর্তে নখরাযুক্ত হাসিতে পরিণত হল।
“আমরা তাহলে একই লাইনের লোক এবং একই এলাকার।”
“হ্যাঁ, তা বটে – তবে পার্থক্য আছে। আপনি হিরোইন হওয়ার জন্যে লড়ছেন আর আমি জুনিয়ার আর্টিস্ট। আপনি ফ্ল্যাটে থাকেন আর আমি ‘চালি’তে (বস্তী) থাকি।”
মুম্বাইয়ের মতো শহরে এতে কিছু আসে যায় না এমনটা বলে তিক্ততা-বচসার অবসান ঘটিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে নিজের গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা দিল সীমা। আর অটোরিকশা ঘুরিয়ে বউনি টাকা না পেয়েও মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে সামনের মোড়ে গোটা তিনেক অটোর পেছনে চলতি প্যাসেঞ্জারের জন্যে লাইন লাগিয়ে দিল সৌমেন।
বান্টী যথারীতি ‘দৈনিক রাশিফল’-এর কথন জ্ঞাত হয়ে আজ তার এক নতুন ব্যাক্তির সাথে মিত্রতা হবে এমন মধুর বানীর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে গোটা কয়েক ফোন করে নিল – বেশীর ভাগই মেয়ে আর্টিস্ট। কমিশন বাবদ কাউকে একদিনের শুটিঙের পয়সা, কাউকে দু’দিন আর কারোর কাছ থেকে নগদ অগ্রিম চাইল। ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করে কয়েকটা ফোন সে শুনলও বটে কিন্তু বন্ধুত্বের কোনও আঁচ কারোর কাছ থেকে পেল না। মনের ভাবাবেগকে বেশ কিছুক্ষন ধরে বাইরে বৈশাখের সূর্যের উষ্ণতার সাথে পাল্লা দেওয়ানোর পর শেষনাগাদ ভরদুপুরে সকালের জমিয়ে রাখা বিশ্বাস পুরোপুরি হারিয়ে নিজ প্রচেষ্টা এবং গ্রহশান্তির প্রয়োজন বোধ করে ফোন করল সে অর্পিতাকে।
সীমা যে দুজনের সাথে শেয়ারিং ফ্ল্যাটে থাকতো তার একজন গতমাসে দ্বিতীয় জনের সাথে কি এক গুপ্ত বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ওর অতি অল্প জিনিশপত্র প্যাক করে চলে যাওয়ার সময় সীমা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তার মুখ থেকে শুধু এইটুকুই শুনেছিল যে, ‘তুই দেখিস – তোর ভালো হবে না’। পরে জিজ্ঞেস করাতে দ্বিতীয় জন সীমাকে নানারকম কিছু বুঝিয়ে নিজপক্ষ সমর্থন করেছিল। আর এদের দুজনের তৎকালীন আয়ের সীমা একটু বেড়ে যাওয়াতে আপাততঃ আর একজন সাথীর খোঁজ এরা করেনি। আর এই দ্বিতীয় জনই হল অর্পিতা।
“আজকে কি মেষ রাশির লোক ধরতে বলল নাকি?” বলেই খিল খিল করে হেসে উঠল অর্পিতা।
“জানু, তোমার ঠাট্টা আজকাল একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে না?”
“তোমার সাথে করবো না তো কি মাঝ বাজারে বিকিনির পোজ দিয়ে মাইকে আকর্ষণ করবো পাবলিকের নজরকে?”
“হা – হা! সে দিনও আসবে। বড় পোস্টার, বিকিনি …”
“ব্যাস – ব্যাস। খুব হয়েছে। বলো কি কাজ?”
“কেন? কাজ ছাড়া কল করা মানা নাকি?”
“এই অসময়ে তো – ”
“তুমি বলেছিলে না – কারুর সাথে আলাপ করাবে? তাই – ”
“আ – হা! আবেগ যে গলে যাচ্ছে দেখছি!”
“সিরিয়াসলি বলছি।”
“এক্সট্রা চার্জ লাগবে।”
“তুমি না – একেবারে পিম্প হয়ে যাচ্ছ!”
“আর তুমি কি? ধোয়া তুলসীপাতা?”
“আচ্ছা – দেবো।”
“এক ঘণ্টায় চলে এসো। ও আসছে। বেচারি পার্স ভুলে গেছিল।”
সীমা পায়ে হাঁটার দূরত্বের মধ্যে আর একটা অডিশন দিয়ে কি মনে করে সদ্য নেওয়া সৌমেনের নম্বরটা ডায়াল করল।
জীবনে প্রথমবার সৌমেন কি মানসিকতা নিয়ে যে একটা প্যাসেঞ্জারকে না করে দিয়েছিল তা সে নিজেই বুঝতে পারেনি। গাড়ীটা সে ঘুরিয়ে দুই বিল্ডিঙের পরে একটা বন্ধ গেটের সামনে ‘বড়া-পাও’এর স্টলের পেছনে সামনের চাকা ফুটপাথে ঠেকিয়ে দাঁড় করিয়েছিল। তারপর একটা ‘বড়া-পাও’ নিয়ে প্যাসেঞ্জার সীটে বসে আনমনা হয়ে খেতে খেতে গত রাতের নিদ্রাহীনতার কারণেই বোধহয় তার চোখ জুড়ে এসেছিল। – বর্তমানে মুম্বাই শহরের নানান বর্ণনের মধ্যে এটাও লেখা হয় এটা ‘সিটি অফ বড়া-পাও’। অনেকের কাছে ওটাই নাস্তা(ব্রেকফাস্ট), ওটাই লাঞ্চ এবং ডিনার।
বেশ কিছুক্ষন ঘুম হয়ে গিয়েছিল সৌমেনের যখন তার মোবাইল ফোনটা বাজল।
“আমি সীমা বলছি। একটু আগে লিংক রোডে ‘ফান রিপাবলিক’ সিনেমার মোড়ে নেমেছিলাম – পয়সা দিতে পারিনি – ”
“হ্যাঁ, বলুন।” সৌমেনের বহু আকাঙ্ক্ষিত একটা হিসেব মিলে গেছে – এমন উত্তেজনায় তার উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মুখটা যেন লাল হয়ে গেল।
“কাছে পিঠে খালি থাকলে – আমি বাড়ি অব্দি যেতাম। পয়সাটাও চুকিয়ে দিতাম। অন্য অটো নেওয়ার থেকে ভাবলাম একটু ট্রাই করে দেখি – ”
“হ্যাঁ – আমি – বলুন কোথায় আসতে হবে?” খেই খুঁজে পাচ্ছিল না সৌমেন।
“এই তো ফান-রিপাবলিকের একটু পরে। তিনটে বিল্ডিং ছেড়ে। আমি না হয় ফান-রিপাবলিকের সামনেই আসছি।”
“ঠিক আছে – আমি আসছি – এক মিনিটে।” উত্তেজনা এখনো কমেনি সৌমেনের। অটো স্টার্ট করে সিনেমা হলের সামনে আসতেই দেখল সীমা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
চিনতে পেরে সীমা অটোতে বসতেই বিনা বাক্যব্যায়ে মেন রোডের দিকে গাড়ী চালিয়ে দিল সৌমেন।
দুপুর রোদ চড়ার সাথে সাথে কিংবা সামান্য কোন উত্তেজনার থেকে এক এক জনের মানসিক অবস্থা ক্রমাগত বিগড়াতে থাকে যতক্ষন পর্যন্ত না কোন বাহ্যিক কিংবা বিপরীত প্রক্রিয়া দ্বারা ঐ উত্তেজনাকে প্রশমিত না করা হয়। সাইকলজিতে এটা একধরণের ‘প্যারানয়া’। আর প্রাচ্য জ্যোতিষে বলতে গেলে স্বচ্ছ প্রমাণ ছাড়াই ‘রাহু-বুধ’, ‘চন্দ্র-শুক্র’ দোষ বলা যায়।
বান্টী ঐ ধরণের কিছু একটার প্রভাবেই বোধহয় তড়িঘড়ি করে এক ঘণ্টার অনেক আগে পৌঁছে অর্পিতার বাহুপাশে আবদ্ধ হয়েছিল।
আধঘণ্টা পরে তিন তলার ফ্ল্যাটে পৌঁছে সীমা সৌমেনকে ভেতরে ডাকাতে একটু কাঁচুমাচু করে ভেতরে সে ঢুকল বটে কিন্তু পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে অর্পিতার ভঙ্গিকৃত ‘ওঃ তাই বুঝি!’ টিপ্পনীটি হজম করতে না পেরে ভাড়া নিয়ে সটান বেরিয়ে গেল।
অতঃপর বান্টী নিজের গুণবত্তা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টায় নানা অঙ্গিভঙ্গির সাথে আজগুবি সব পুরনো কাহিনীর রূপান্তরন প্রস্তুত করে পরিবেশন করা শুরু করল।
একই দিনে দুই ভিন্ন চরিত্রের সম্মুখীন হয়ে তারতম্য খোঁজার চেষ্টা করে বান্টীকে আকর্ষক পেলেও সকাল হতেই যেন সৌমেনের রিক্সা ভাড়া নেওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়ে যেত সীমার। কিছু একটা ব্যাপারতো ছিলই।
কালাতিপাতে বান্টী সীমাকে কয়েকটি টিভি বিজ্ঞাপন এবং সিরিয়ালে ছোট ছোট রোল পাইয়ে দিল। ক্রমাগত সীমার আয়বৃদ্ধির সাথে সাথে তার স্ট্যাটাসও বৃদ্ধি পেল। স্বাধীনভাবে ঠিক পাশের বিল্ডিঙের একটা ফ্ল্যাট সে ভাড়া নিল এবং আরও কিছুদিন পরে একটা সেকেন্ডহ্যান্ড সস্তা গাড়ীও কিনল। বান্টীও নানান ধরণের নাটকবাজি করে সীমার ফ্ল্যাটে নিজের জায়গা করে নিল মুম্বাইয়ের ‘লিভ ইন রিলেশনশিপ’-এর আওতায়। ধন্যবাদ ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে এই বিল পাস করার জন্যে।
সীমা এখন বাণ্টীর ওপর অর্থ এবং শরীর দুটোই ব্যয় করে নিজেকে সুখী মনে করতে থাকল বটে কিন্তু সৌমেনকে কেন যেন সে ছাড়তে পারল না। তাকে ড্রাইভারের জায়গায় বসিয়ে দিল। সৌমেন যখন গাড়ী চালাত সীমা একা থাকলে তার পাশেই বসত।
সৌমেন কিন্তু নিজের অটোরিকশাটা না বেচে সেটা ভাড়া খাটাতে লাগল। তারও স্ট্যাটাস পরোক্ষ ভাবে বাড়ল বটে কিন্তু নিজেকে সে অতি হীন ভাবতে আরম্ভ করল বোধহয় বেশীর ভাগ সময় বান্টীর উপস্থিতির কারণে।
সীমাকে ছাড়তে না পারা, বান্টীকে সহ্য করতে না পারা এবং তৎসঙ্গে সীমার কাছে মনের কথা খুলে বলার অক্ষমতা অল্প দিনের মধ্যেই সৌমেনকে মদ্যপানের রোগ ধরিয়ে দিল। অন্ততঃ রাত্রিগুলো জ্বালামুক্ত করার জন্যে।
মাস দেড়েক পরে সীমা জানতে পারল কোন এক রাতে বান্টীর অত্যধিক এবং নিজের কিঞ্চিত মদ্যসেবনের কারণে অসুরক্ষাজনিত শারীরিক সম্পর্কের ফল স্বরূপ সে অন্তঃসত্বা হয়ে গেছে। অনেক অনুনয়-বিনয় এবং বাদ-বিবাদ-বচসার পর বান্টীর সীমাকে বিয়ে করার পূর্ব প্রদত্ত প্রস্তাব সম্পূর্ণ অস্বীকার করাতে অগত্যা নিরুপায় হয়ে সীমাকে মুম্বাইয়ের শহরতলি এলাকার এক অতি ছোট নিম্নমানের নার্সিং হোমে বেশ কিছু অতিরিক্ত পয়সা দিয়ে গর্ভপাত করাতে হল। আর তৎপশ্চাৎ তার সদা উৎফুল্ল চরিত্রটা কেমন যেন মুঝ্যমান হয়ে গেল।
তারপর একদিন ভরদুপুরে একটা অডিশন ক্যান্সেল হয়ে যাওয়াতে বাড়ি ফিরে নিজের চাবি দিয়ে দরজা খুলতেই সীমার দৃষ্টিগোচর হল তার বিছানার ওপর বান্টী আর অর্পিতার নগ্ন শরীরের আলিঙ্গন। কামান্ধ দুই প্রাণীর কানে দরজা খোলার শব্দটুকুও প্রবেশ করেছিল না।
সীমার প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে যাওয়াতে বান্টী নিজপক্ষ সমর্থনে জানাল এটা কোন বড় অপরাধ নয়। মুম্বাই কোন গ্রামাঞ্চল বা ছোট শহর নয়। তার ওপর সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এই ধরণের ঘটনার কোন গুরুত্ব নেই – এটা খুবই সাধারণ। কথাগুলো সে এমনভাবে বলেছিল যেন শ্রীমদ ভাগবদ গীতার সেই বিশিষ্ট বচনটি সিদ্ধ করতে চাইছিলঃ
আজ যাহা তোমার হইয়াছে কাল তাহা অন্য কারোর রহিয়াছিল এবং পুনঃ কাল তাহা অন্য আর একজনের হইয়া যাইবে… ইহাই চিরাচরিত নিয়ম…।
মোক্ষম বলেছিল বটে কিন্তু ফল ধনাত্মক হল না। অর্পিতা নাম্নী অতীত কালের ‘সেই অন্য কেউ’ মাথা নুইয়ে বেরিয়ে গেল। আর সীমা বান্টীকে “এই মুহূর্তে বেরিয়ে যা” বলে তার একমাত্র অস্থাবর সম্পত্তি পুরনো একটা সুটকেস টেনে বের করে তার সামনে ফেলল। আলমারি থেকে একআধটা জামাকাপড় এবং বাথরুমে টাঙানো আধভেজা তোয়ালেটাও ছুঁড়ে মারল সেই সুটকেসের ওপর।
“কোথায় যাবো?” গলার ঝাঁঝ কমিয়ে অনির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ চিন্তার প্রশ্ন করল বান্টী।
“জাহান্নমে – ঐ কাল তুই যার ছিলি তার কাছেই যা – কিংবা কাল আবার যার হয়ে যাবি তাকে খোঁজ – আর তার কাছে যা। কিন্তু এখান থেকে বিদেয় হ।”
এইরকম তুইতাকারি এক আধবার এর আগেও হয়েছিল কিন্তু তখন প্রসঙ্গ ছিল অন্যরকম এবং এইরকম উগ্রচণ্ডী সীমা কখনও হয়নি।
বেগতিক দেখে আগত্যা কাপড়গুলো সুটকেসে কুচিমুচি করে ঠুসে দিয়ে মাথা নিচু বান্টীর জুতো পরতে পরতে কিছু বলার উদ্যত হওয়ার আগেই ধমক দিল সীমা।
“একটাও কথা নয় – বেরো এই মুহূর্তে।”
আর কথা না বাড়িয়ে মৌন হয়ে বিদায় নিল বান্টী।
গাড়ী পার্ক করে এসে অর্পিতাকে নতমস্তকে এবং ফ্যাঁকাসে পড়া মুখ নিয়ে বেরোতে দেখে সৌমেন সব বুঝে গেছিল। গাড়ীর চাবিটা সে কিভাবে দেবে তাই ভাবতে ভাবতে তার কানে সীমার ক্রুদ্ধ স্বরের কিছু কিছু অংশ আসা সত্ত্বেও অর্থবোধক হল না বটে কিন্তু অল্পক্ষণ অপেক্ষা করার পর বান্টীকে দেখে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। পথের কাঁটা সরে গেছে জেনেও কোন আনন্দ তার বোধ হল না। বরং সীমার দুঃখিত হৃদয়ের কথা ভেবে চোখদুটো তার কেমন ঝাপসা হয়ে উঠল।
সীমা রাগে দুঃখে অধীর হয়ে ফ্রিজ খুলে বান্টীর জন্যে রাখা বিয়ারের শেষ ক্যানটা বার করে হ্যাঁচকা টানে খুলে এক নিঃশ্বাসে গলায় ঢালল সবটুকু। তারপর কি মনে করে দরজা খুলে দেখে সৌমেন দাঁড়িয়ে সামনে। গাড়ীর চাবিটা হস্তান্তর করার জন্যে সৌমেন হাত বাড়াতেই সীমা ‘দাঁড়াও’ বলে চট করে ভেতরে গিয়ে ফ্ল্যাটের চাবিসুদ্ধ হ্যান্ডব্যাগটা সোফা থেকে তুলে নিয়ে বাইরে এসে দরজা টেনে বলল, “চলো।”
সৌমেনের কোন প্রশ্ন করার সাহস হল না। নির্দেশমতো সোজা জুহু এলাকার এক উচ্চশ্রেণীর বারের পার্কিং-এ গাড়ী ঢোকাল সে।
বারে ঢুকে সীমা দুটো বিয়ার অর্ডার করল বটে কিন্তু ড্রাইভিং-এর অছিলায় সৌমেন হাত লাগাল না তার বরাদ্দ গ্লাসটাতে। তার চিন্তা ছিল বাড়াবাড়ি কিছু হলে সীমাকে সামলাতে হবে।
অনেক রাতে ফ্ল্যাটের ভেতর সীমাকে ঢুকিয়ে তার হাতে চাবিটা দিতে যাবে এমন সময় সীমা যেন কোন নেশা করেনি এমনভাবে বলে উঠল, “ওটা তোমার কাছেই রাখো। কাল বারোটায় একটা মীটিং আছে। তুমি এগারোটাতে চলে এসো।”
দীর্ঘ দিন পর একটা শুটিং ডেট সৌমেন পেয়েছিল পরের দিনের। কিন্তু তা সে মনে মনেই ক্যান্সেল করে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে।”
অসুস্থতার বাহানা করে শুটিংটা ক্যান্সেল করে পরের দিন যথারীতি সীমাকে নিয়ে ঘুরতে থাকল সৌমেন এক অডিশন থেকে অন্যটাতে। সবই নিষ্ফল। সীমার মন, শরীর আর মুখ – সব আলাদা কথা বলল। রাতে আবার মদের বার। এবারে বিয়ার নয় – হুইস্কি।
দুদিনেই বড় বার থেকে ছোট বার – হুইস্কি থেকে ‘রাম’ এবং তারপর সৌমেনের আর ডাক পড়ল না।
অত্যন্ত দুশ্চিন্তা এবং দোটানার সাথে আরও তিনটে দিন কাটিয়ে সন্ধ্যের সময় সীমার ফ্ল্যাটে গিয়ে উপস্থিত হল সৌমেন। এই কয়েকদিন বস্তুতঃ সে বিন্দুমাত্র মদ্যপান করেনি। তার মনের ক্ষোভও মিটে গেছিল এবং তার জায়গায় এক আলাদা দায়িত্বজ্ঞান জেগে উঠেছিল।
সৌমেনকে দেখে সীমার চোখদুটোতে কেমন যেন এক চমক এল। ইতিহাসের শোনা কথা থেকে সৌমেন জেনেছিল মুমতাজ বেগমের মৃত্যুর পর এক রাতেই নাকি শাহজাহানের মাথার সব চুল পেকে গেছিল এবং সে যেন অতি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা তো শোনা কথা – ইতিহাসের। এখানে তো সে নিজের চোখে দেখছে। সীমার চোখের নিচে কালি। মুখটা শুকিয়ে গেছে। চোখের দৃষ্টি নিষ্প্রভ হয়ে যেন সম্পূর্ণ হেরে যাওয়া জীবন যুদ্ধের ব্যাখ্যান দিচ্ছে।
সৌমেনের বুকের মধ্যে কেমন এক চিনচিনে ব্যাথা হতে লাগল আর তার মনে হল সীমা এখনও বেশ নেশাতে রয়েছে। আসলে আজকাল সে বাড়ীতে বসেই বোতল অর্ডার করতো হোম ডেলিভারির জন্যে।
“তুমি কেন আসনি এতদিন? কেন? আমার ‘হাল-চাল’ও জিজ্ঞেস করনি – কেন? তুমি কি ভুলে গেছিলে – আমি জিবিত? কেন?”
কেমন একটা অবাস্তবতা ছিল তার ভাষায় এবং কণ্ঠস্বরে। সৌমেনের আমতা আমতা করার পর অল্প সময়ের মধ্যেই দুটো গ্লাস তৈরি হয়ে গেল। সীমা ফোন করে আরও একটা বোতল আর কিছু খাবার অর্ডার করল।
বেশ রাতে সৌমেন বাড়ি ফেরার উদ্যত হলে স্বাভাবিক সংজ্ঞা রহিত সীমা তাকে হঠাৎই নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলে উঠল, “আজ রাতটা আমার কাছে থেকে যাও না।”
সৌমেন যেন সীমার মধ্যে গভীর দুঃখ জড়িত এক অবাস্তব ভিন্ন অনুভূতির কামবাসনা অনুভব করল। সমব্যথায় তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসাতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সে যেন স্বগতোক্তি করে উঠল, “না – তা কি করে হয়?” কথাটা ঋণাত্মক শোনালেও নিজের অভ্যন্তরীণ ধনাত্মক কামনার কারণে তার চোখ ভরে জল এল।
সীমা বুঝল তার ভালোবাসার গভীরতাকে। বাহুপাশের বন্ধন আলগা করে অশ্রুসিক্ত চোখদুটো তুলে সে করুণভাবে প্রশ্ন করে যেন অনুমতি চাইল। “আমি কি নিজেকে তোমার কাছে সমর্পণ করতে পারিনা? আমি আশ্রয় চাই। জীবন সংঘর্ষে হেরে যাওয়া আমার শরীর ও মন আশ্রয় চায়। তোমার আশ্রয়।”
এই বহু আকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের জবাব স্বরূপ সৌমেন প্রথমে শ্লথ ও পর মুহূর্তে দৃঢ় ভাবে আলিঙ্গনবদ্ধ করল সীমাকে।
শুরু হল এক নতুন সংগ্রাম পরদিন থেকে। সীমা তার এই কয়েক বছরের মডেলিং এবং অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতা এবং পরিচিতদের সাহায্যে সৌমেনকে নিয়ে এক ফিল্ম কোম্পানি শুরু করে নিজেরই এযাবৎ জীবন কাহিনী অবলম্বনে প্রথম ছবি নামাল “মুম্বাই জিন্দাবাদ”।
ছবির প্রি-প্রোডাকশনের ব্যস্ততার মধ্যে সীমা একদিন খবর পেয়েছিল অর্পিতার আত্মহত্যার। খোঁজ নিয়ে জেনেছিল এই দুর্ঘটনার পর থেকে বান্টীর কোন খোঁজ কেউ পায়নি। পুলিস তাকে খুঁজছে।
এইটাই হল ছবির ক্লাইম্যাক্স। এরপর মেট্রো সিটির জীবনধারার কিছু দোষগুণ বিচার করে নায়ক এবং নায়িকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল।
প্রিমিয়ার শো’তে অজস্র তালির শব্দে মুখে হাসি চোখে জল নিয়ে সীমা এবং সৌমেন পরস্পরকে বাহুপাশে বাঁধল। সমস্ত শিল্পী এবং টেকনিশিয়ানদের নামের শেষে বড় করে পর্দায় ভেসে উঠল ছবির নাম ‘মুম্বাই জিন্দাবাদ’।