By A R Sarkar
“আমার স্ট্যান্ডার্ডের কথা বলছ? নিজের স্ট্যান্ডার্ডটা একবার ভেবে দেখ। সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
টিভির পর্দাতে নায়কের এই সংলাপটা শোনা মাত্রই মায়ার চোখ ফেটে যেন জল আসতে চাইল। নিমেষে হারিয়ে গেল সে সদ্য ভুলে যাওয়া অতীতের স্মৃতির ভিড়ে।
গ্রামে গঞ্জের ছাপ কাটিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছায় দু দু বার এস.এস.সি. পরীক্ষায় অসফল হওয়া বনেদী পরিবারের মায়া প্রাইভেট কোম্পানি তে ভাল চাকরী পাওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে জেদ করে বেশ কয়েকটা বিবাহ সম্পর্ক নাকচ করে মুম্বাইয়ে থাকা দূর সম্পর্কের এক মাসীর বাড়ি এসে উঠেছিল।
ভারতের অন্য বড় শহর গুলোর তুলনায় মুম্বাইয়ের বিশেষ একটা অন্য ধরনের গুণ আছে। অত্যধিক প্রচেষ্টায় চাকরী, পরীক্ষায় সফলতা, আরোগ্য – এই সবের প্রাপ্তি হোক বা না হোক – অতি স্বল্প কিংবা বিনা প্রচেষ্টায় বয় ফ্রেন্ড, গার্ল ফ্রেন্ড নিশ্চিত জুটে যায়। তাও আবার বয়স নিরপেক্ষে। মায়া এর ব্যতিক্রম ছিল না।
আর বন্ধু প্রাপ্তির সাথে সাথেই দূর সম্পর্কের আত্মীয় বাড়িতে শুরু হল কলহ।
“রবিবারেও ইন্টার্ভিউ হয় নাকি? তাও রাত পর্যন্ত?….”
“ওমা! এত সকালে কোথায় কে চাকরী দেবে?……”
“খাবার যদি বাইরেই খেয়ে আসবে তাহলে একটা ফোনই করে দিতে। আমরা জেগে বসে থাকতাম না। স্মার্ট ফোনটা একটু এই কাজে ব্যবহার করলে ভাল হয় না কি?”
প্রেমে পড়লে নিজের মা-বাপের মধুর উপদেশও গঞ্জনা সদৃশ মনে হয়। তা এ তো অতি দূর সম্পর্কের মাসী। হজম হত না এইসব টীকাটিপ্পনী মায়ার।
কি পোড়ার বি.এ. পাসটা যে করেছি লোকে দেখতেও চাইছে না। বলেছিলাম বাবাকে কোলকাতা গিয়ে রেগুলার কোর্স করি, কিছুতেই রাজী হল না। এখন এই মাসীর গঞ্জনা আর সইতে পারছি না। মাকেও কিছু বলতে পারবো না। একটু স্বাধীনভাবে থাকতে চাওয়া কি এতই অপরাধ?
বিদেশ বিভূঁইয়ে পুরুষদের বিশেষ করে যুবকদের মনে কোন আগন্তুক মহিলাকে নিজের দেশের কিংবা এলাকার মনে হলেই আচার দেখে জিভে জল আসার মতো নিমেষে বার্তালাপ করার সদিচ্ছা জাগ্রত হয়।
“আপনি কি বাঙালি? আমিও বাঙালি।” মাত্র দু সপ্তাহ আগে এই দিয়েই শুরু করেছিল দিব্যাংশু গাঙ্গুলি যখন মায়া তার মা’র সাথে কথা শেষ করে ফোনটা ব্যাগে রাখতে যাচ্ছিল।
দু সপ্তাহের ঘনিষ্টতার অধিকারে এখন পুরুষোচিত সহানুভূতির সাথে জবাব এল দিব্যাংশুর, “মোটেও অপরাধ নয়। বরং এটা তোমার অধিকার হওয়া উচিত।”
মায়ার প্রশ্নবোধক বিহ্বল দৃষ্টির ওপর বলে চলল দিব্যাংশু, “আরে কাল তুমি চাকরী পাবে – তার পর তো – আজ অমুকের বার্থডে পার্টি, কাল কারোর ম্যারেজ এ্যানিভার্সারি, কারোর ইনক্রীমেন্ট পার্টি, কারোর বা ফেয়ারওয়েল পার্টি, অফিস ট্যুর, গ্রুপ ট্যুর। এসব তো লেগেই থাকবে। সবটা যদি নাও এ্যাটেন্ড কর তাহলেও তোমার বাইরে যাওয়া, দেরীতে আসা এসব অধিকার থাকাই উচিত। ছোট বাচ্চা তুমি তো নও।”
দিব্যাংশুর কথায় মগ্ন হয়ে মনের কোনায় প্রায় শুকিয়ে যাওয়া উচ্চাশাগুলোকে পুনর্জীবিত করছিল মায়া।
“আমি বলি কি – তুমি ওই মাসীর বাড়ি ছেড়ে দাও। হ্যাঁ।”
“কোথায় থাকবো? চাকরী কবে হবে তার কি কোন ঠিক আছে? এই শহরে তো শেয়ারিং করে থাকতে গেলেও মাসে কমপক্ষে সাত আট হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। তা তো এখন সম্ভব নয়।”
“ কিছু যদি না মনে কর এবং যদি সরলভাবে নাও তাহলে একটা কথা বলি?”
শুধু মাথা নাড়ল মায়া – হ্যাঁ সূচক।
“আমার বাসায় থাকবে? আপাতত – লিভ-ইন-রিলেশনশিপ। পরে তো আমরা চিরকালের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবো – বিবাহ বন্ধন। শুধু তোমারই মত চাই।”
অভিভূত মায়া বেশ কয়েক সেকেন্ড পরে ঢোক গিলে একটা ‘কিন্তু’ বলতেই দিব্যাংশু প্রায় নাছোড়বান্দার মতো বলে উঠল, “ ‘কিন্তু’ কেন? ভরসা রাখো। সব ঠিক হবে। চাকরীর জন্যে আমিও তোমাকে হেল্প করবো। পাশে থাকলে তোমারও সাহস বাড়বে আর আমারও মানসিকতা বাড়বে তোমায় হেল্প করার।”
“বাব মাকে কি বলবো? মাসীকে কি বোঝাবো?”
“যা মাসীকে বলবে তাই বাবা মাকে বলবে। সিম্পল। আমার অফিসের সরলা’কে তো তুমি চেন – সরলা শ্রীবাস্তব। আমাদের বিল্ডিঙের দশ তলাতে শেয়ারিঙে থাকে। মাসীকে ঐ ঠিকানা দিয়ে দিও। আমি ওকে বলে বুঝিয়ে দেবো। ওরা সবাই মাসীকে ম্যানেজ করে নেবে। আর তোমার সাথে মাসীর এখন যা সম্পর্ক তাতে ও কখনও তোমাকে দেখতে আসবে না। ওই হায়-হ্যালো টুকুই রাখবে – তুমিও রেখো। এখনকার দিনে তো আর সেই ঘড় ঘড় করে কালো টেলিফোন ডায়াল করা নেই – মনুষ্যটি ঐ স্থানে রহিয়াছে কিংবা নাই জানিবার হেতু।”
দিব্যাংশুর ফোন ডায়াল করার ভঙ্গী আর হাসির সাথে তাল মিলিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠল মায়া।
“ব্যস্ ব্যস্, সমস্ত বুঝিয়া গিয়াছি। তোমায় আর সাধু ভাষাতে বুঝাইতে হইবে না।”
* * *
বর্তমান যুগে পুরুষ আর স্ত্রীর প্রেম নৈসর্গিক থাকে যতক্ষন তারা শারীরিক সম্পর্ক রহিত হয়ে একে অন্যের থেকে পৃথক থাকে। আর তা না হলে এই প্রেম কম হতে হতে প্রায় এক কর্তব্য বোধে পরিণত হয়ে যায়। আর কর্তব্যের বোঝা যদি মাথায় না চাপে কিংবা উভয় ব্যাক্তি যদি কর্তব্যপরায়ণ না হয় তাহলে প্রেম নষ্ট হয় এবং তার জায়গায় জন্ম নেয় কলহ। সেই জন্যেই বোধহয় প্রেমের পরে বিবাহ এবং তারপর সন্তান উৎপত্তি এবং সন্তানসন্ততির পালন পোষণ আমাদের সমাজ ব্যাবস্থাতে রয়েছে।
“চাকরী খোঁজাটা নিয়ে একটু বেশী বাড়াবাড়ি করছ না কি?”
মাত্র এক মাস যেতে না যেতেই একদিন ঝাঁঝালো কন্ঠে স্বামিত্ব কিংবা প্রভুত্ব দেখাল দিব্যাংশু। অন্ততঃ মায়ার তো তাই মনে হল।
“চাকরী তো একটা চাইই। এতে আবার বাড়াবাড়িটা কোথায়?” মায়াও কম যায় না।
“বাড়াবাড়ি তো বটেই। কতবার তো বললাম – ধৈর্য রাখো। আপাতত চাকরী না করলেও তোমার চলবে। সেটুকুন পয়সা তো আমি আয় করি।”
“সেটা তোমার পয়সা – আমার আয় করা তো নয়। স্ট্যান্ডার্ড বাড়াতে হলে চাকরী একটা দরকার। সোজা কথা সোজা ভাবে বোঝার চেষ্টা কর।”
“আমার স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে কথা বলছ? নিজেরটা দেখ। সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
গরম তেলে ফোঁড়ন পড়লে যা প্রতিক্রিয়া হয় মায়ার প্রায় তাই হয়েছিল। এতদিনের ইচ্ছাপূর্তি না হওয়ার নিরাশা যেন তার মাথার মধ্যে ক্রোধরূপী পোকা হয়ে কিল বিল করে উঠল।
বড় হওয়ার স্বপ্ন, সমাজে অনামা হয়ে জীবন না কাটানোর জেদ আর নিরন্তর অসফল হয়ে যাওয়ার হীনমন্যতা এখন এক চরম উচ্চমন্যতায় পরিণত হয়ে গেছিল যাকে ইংরেজিতে বলে ‘সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স’ – তুমি কে আর আমি কে।
দিব্যাংশু প্রথম প্রথম এগুলো একটু সরলভাবেই নিত। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে মায়ার ব্যাবহারে কেমন যেন একটু জিতে নেবো – জিততে হবে ভাব দেখে নিজের ধৈর্যকে সামলে রাখতে পারছিল না।
কথা কাটাকাটি আর জিনিষপত্র ছোঁড়াছুঁড়ির পর বেশ একটু হাতাপাইও হয়ে গেল। বিছানায় পরে ভাব হল বটে কিন্তু পরের দিন থেকে মায়া আর দিব্যাংশুর সাহায্য নিল না চাকরী খোঁজার জন্যে। নিজেই আবেদন করতে লাগল আর ওয়াক-ইন-ইন্টার্ভিউ তে যেতে থাকল খবরের কাগজ কিংবা অনলাইন ভ্যাকেন্সি দেখে।
বড় বড় অফিসগুলোতে সরাসরি ‘না’ হয়ে যেত আর ছোট অফিসগুলোর লোকেরা মায়ার প্রতি যে দৃষ্টি দিত, নানান্ কথায় যা ইশারা করত তা মায়ার বুঝতে এতটুকু দেরি হত না। কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ হত আর তার থেকে জাগত ক্রোধ। ভালোবেসে সে একবার কম্প্রোমাইজ করেছে। কিন্তু তা’বলে ঐটাই করে যেতে হবে এমন কথা তার ডিক্শনারিতে নেই।
“ইতিহাস সংস্কৃত নিয়ে ঘরে বসে ওপেন ইউনিভার্সিটির বি.এ. পাস মুম্বাইয়ের মতো শহরে কিছু কাজে লাগে না। স্কুল সার্টিফিকেট দিয়ে ছোট ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন গার্ল এর কাজ খোঁজ। যদি পেয়ে যাও।” দিব্যাংশুর থেকে শেখা কিছু বাংলা আর নিজের হিন্দি মিশিয়ে ঝাল মেটাল অতি স্পষ্টভাষী সরলা। ও দিব্যি দিয়ে দিয়ে দিব্যাংশুর কাছ থেকে ইদানীং কালের মায়ার চরিত্র জেনেছিল আর দিব্যাংশুও তাকে বলে নিজের মনের ভার হাল্কা করেছিল।
আসলে বছর খানিক আগে যখন সরলা বাসা শিফ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছিল তখন এক দিন দিব্যাংশুকে সরাসরি ঠাট্টার ছলে বলেছিল, “আমি কি তোমার সাথে থাকতে পারি না? তোমার রান্না করে খাওয়ার অসুবিধেটা যেত।”
“কুক? – না বাবা। আর তা যদি না হয় তাহলে দ্বিতীয় কথা হল দু-বছরের আমাদের এই চাকরীতে আমি তোকে ঐ ভাবে কোনদিন দেখিনি। ভুল বুঝিস না প্লীজ।”
দিব্যাংশুর এই জবাবে সরলা হেসে কথাটা উড়িয়ে দিয়েছিল বটে তবে তার ছলছল করে ওঠা চোখদুটো দিব্যাংশুর দৃষ্টিগোচর হয়েছিল।
মায়া সরলার কথার জবাব দিতে পারল না। নিজের মনে ঘৃণা আর আক্ষেপ বাড়ল। বাবার ওপরেও রাগ হল। কেন রেগুলার কলেজে পড়াল না। তখনই আবার মনে পড়ল মার্কস তো কিছুই ছিল না। টায় টায় তো পাস করেছিল। রাগ যেন আরও বেড়ে গেল এখন নিজের ওপরে। “তাহলে আমার ভবিষ্যৎ কি? আরও চার জনের সাথে লিভ-ইন-রিলেশনশিপে থেকে হাতাপাই করতে হবে, নাকি দূরের মাসীর গঞ্জনা শুনে শুনে রক্ত গরম করে বাড়ি পালিয়ে যেতে হবে?” রাগ এবং কষ্ট মিলিয়ে কেমন যেন গা গুলানো মাথা ভার মতো হয়ে গেল মায়ার। বুক ঢিপ ঢিপ করতে থাকল।
পরের দিন দিব্যাংশু রোজকারের মতো ‘আসছি’ বলে দরজা টেনে অফিস বেরিয়ে গেল। বিগত এক সপ্তাহের মধ্যে এই প্রথম বার মায়ার মনে এল ‘হ্যাঁ, এসো’ কিন্তু ‘এসো’ টা মুখের মধ্যেই রয়ে গেল। নাহলে হয়তো দিব্যাংশু ফিরে বলত – সময়মত খেয়ে নিও, অটো নেবে, রোদে ঘুরবে না …। ঠিক আগের মতো।
মায়ার কেন জানি বুকের মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব হল। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে এল। বন্ধ হয়ে যাওয়া দরজাটার ওপারে ছুটে গিয়ে যেন ‘এসো – সাবধানে যেও’ বলার ইচ্ছে হল। কিন্তু শরীর তো কই নড়ল না।
শরীর যে মস্তিস্কের ইশারাতে চলে, মনের নয়। আর মস্তিস্ক যে তার এখনও মানতে চাইছিল না দিব্যাংশুর সাথে থাকা সম্ভব হবে।
রাত প্রায় আটটা নাগাদ দিব্যাংশু ইদানীং রোজের মতো নিজের চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখে মায়া নেই। তার ফোন বন্দ। ঘণ্টা খানিক অপেক্ষা করার পর কি মনে করে সরলাকে ফোন করল দিব্যাংশু।
“মন কে একটু শান্ত করো তুমি। ও চলে গেছে।”
সরলার বোঝানোতে হোক বা নিজের ইচ্ছায় হোক যে মায়া আলাদা হয়ে সুখে থাকুক, দিব্যাংশুর চিন্তা আর উদ্বেগ প্রশমিত হয়ে এল বটে কিন্তু বুকের ভেতরটা তার কেমন যেন খালি মনে হতে লাগল।
মায়া কারেন্ট বুকিং এ টিকিট পেয়ে সোজা বাড়ি রওনা হয়েছিল সরলাকে ফোন করে। দিব্যাংশুকে ফোন করার সাহস বোধহয় জোটাতে পারেনি। কটু হলেও সরলাই তো তার চোখ খুলে দিয়েছিল।
সরলাও জেনে শুনে খবরটা তখুনি তখুনি দেয়নি দিব্যাংশুকে। দিল এখন ফোন আসাতে। স্বার্থ একটু কখনো কখনো জেগেই ওঠে মানুষের মনে।
“ও বলেছে কোন ফোন না করতে বা খবর না নিতে। লিভ-ইন-রিলেশনশিপে ওর জীবনদর্শন হয়ে গেছে। তাই’ই আমাকে বলল। তুমি জানো আমি ঠাট্টা করি কিন্তু সবসময় নয়। কিছু বলার ছিল না তাই তোমায় না করে আমাকে ফোন করেছিল। আমি জানি তোমার এই মুহূর্তে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কাল দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। কাল অফিসে কথা বলবো। রাখো।”
সরলা ঐরকমই একটু কাঠখোট্টা। দিব্যাংশু জানে। কিন্তু ভেতরে শাঁসটা খুবই কোমল। অফিসে অনেকে তাই বলে।
বাস্তববাদী দিব্যাংশুর চোখে এখন জল এল বোধহয় মায়ার সুখচিন্তা করার চেষ্টাতে।
“আমি দেখাবো একদিন তোমাকে আমার স্ট্যান্ডার্ড। সেদিন – …” টিভি তে নায়িকার দম্ভ ভরা সংলাপ চলছে।
আলতো ছোঁয়া লাগল মায়ার পিঠে।
“এই সিরিয়ালটা তুমি দেখো না। মিছিমিছি অতীতের গ্লানি সামনে আসবে।”
মায়ার বিবাহিত স্বামী, অরিন্দম। মায়ার বাবার বন্ধুর ছেলে। শহরতলীর মাধ্যমিক স্কুলের অংকের শিক্ষক। বিয়ের রাতে মায়াকে বলেছিল, “একটা কথা বলি – আমি তোমাকে ক্লাস এইট থেকে ভালবাসতাম। মনে মনে। তুমি যখন অংক পারতে না আমার খুব কষ্ট হত।”
মায়ার কাছে কোন জবাব ছিল না।
“এ তো আজও ঘটছে – ঘটে চলেছে। এখানে দেখে শেখার কিংবা শুনে শেখার মানসিকতা কেউ তৈরি করতে পারে না। সবাই ঠেকেই শেখে।” মায়ার পিঠ থেকে হাত না সরিয়েই শান্ত স্বরে বলে চলল অরিন্দম।
হঠাৎ যেন স্পর্শটা দিব্যাংশুর বলে মনে হল মায়ার। চোখ ফেটে জল এল তার।
অরিন্দমের আর ঝাপসা হয়ে আসা টিভির আওয়াজ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।
“এটা শুধু তোমার জীবনের ঘটিত অংশ নয় – এটা শত-সহস্র জনের জীবনচরিতের সংকলন।”
Khub sundor