(ধারাবাহিক উপন্যাস)
মুখবন্ধ
পূর্ব ভারতের এক হিন্দিভাষী রাজ্য যেখানে আজও অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ এবং অন্য অনেক অন্ধবিশ্বাসের সাথে তদানীন্তন সমাজের অগ্রগতি অক্ষুণ্ণ রয়েছে। যেখানে শান্তির স্থান দখল করেছে লাঠি-বন্দুকের জোরে ন্যায়-অন্যায় অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার অশান্তি। যেখানে আজ ভোট জেতার রাজনৈতিক ভয়াবহতার সাথে সাথে শোষণ-পীড়ন তুঙ্গে। যেখানে প্রতিবাদের অধিকার যেন তাদেরই যারা নিজেরা কোন না কোন সংগঠন চালায় অথবা ঐ সব সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। যেখানে বাস্তবিক ভাবে খাটে ‘জোর যার মুলুক তার’ প্রবাদটি। নিরপেক্ষ জীবন যেখানে অসম্ভব বলে ঘোষিত হয়েছে মনে করা হয়।
এইরকম পটভূমিকায় আমার কাহিনীর নায়ক দামোদর পোদ্দার উর্ফ দামু – এক দলিত যুবক যার প্রতিবাদের ভাষা মূক, যার মনে অন্তর্দন্দ্ব হীনমন্যতার অব্যাহতি এবং নিজেকে সমর্থ বানানোর ইচ্ছাকে নিয়ে – কি করতে চেয়েছিল? আর নিয়তি তার সাথে কি খেলা খেলল? দামুর জীবনের মাত্র এক দিনের ঘটনা নিয়ে আমার এই কাহিনী যেখানে শুধু রয়েছে ঘটমান দৃশ্যপট – নেই কোন প্রতিকার সম্ভাবী অশুভের।
এ.আর. সরকার
আমার গুরু, আমার প্রেরণা আমার স্বর্গীয় পিতা সুধীর চন্দ্র সরকারের চরণ কমলে নিবেদন করলাম আমার এই উপন্যাস।
সর্বনাশের এক রাত
প্রথম পর্ব
বিল্টন সিং এর হীন বাসনা
গতকালের মত আজও সাত সকালে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল দামু। চরম অন্তর্দন্দ্ব, দুঃখ, হীনমন্যতা আর রাগ তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। মাথা যেন তার ফেটে যাচ্ছিল। গরম কাল। বিস্তীর্ণ মাঠের ওপারে গাছ-গাছালির পেছনে ফেলে আসা ইট ভাঁটার চিমনির পাস দিয়ে সূর্য্য দেবতা উঁকি দিয়েছে। রোজই তো তাই হয় কিন্তু আজ যেন দামুর মনে হল ওই চিমনিটা বোধহয় সূর্য্যটাকে উঠতে দেবে না। ভাঁটার মালিক আর চিমনি যেন এক বলে মনে হল তার কাছে। স্বার্থপর, শোষণকারী, অত্যাচারী আরও কতকিছু যার পরিস্ফুটন তার শব্দকোষে এই মুহুর্তে এলো না, বোধহয় বারো বছর আগে কালের ঘূর্ণিপাকে পড়ে সপ্তম শ্রেণীর চৌকাঠ পেরোতে না পারার জন্যে। আর এই অনুভূতিটা হওয়া মাত্রই কাটা ঘায়ে যেন নুনের ছিটে পড়ল। মেঠো রাস্তার মধ্যিখানে পড়ে থাকা একটা আধলা ইটে ঘষে যাওয়া হাওয়াই চপ্পল পরা পা দিয়ে মারল এক লাথি। পায়ে লাগা চোট তার অস্থির স্নায়ুর দ্বারা মস্তিষ্ক পর্য্যন্ত পৌঁছুল না বটে কিন্তু চোখ তুলে চাইতেই দেখতে পেল একশো-দু ঘরের গ্রামের বাইরের মাঠের মধ্যে পরিত্যক্ত জলা পুকুরের পাড়ের বটগাছ পর্য্যন্ত সে পৌঁছে গেছিল।
ক্ষনভর গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই হঠাৎ যেন তার মনে হল পায়ের ব্যথাটা অন্যভাবে বুকের মধ্যে কিণ কিণ করে উঠছে। কালকেরই তো ঘটনা। চোখের সামনে ভেসে উঠল পূজার ছলছলে আকুতি ভরা চোখ দুটো। দু গাল বেয়ে যাওয়া চোখের জলে ভরা তার মুখটা। তারপরই স্মৃতিচারণ করল সম্পূর্ণ ঘটনার।
***
এলোকেশী পূজা কাছে টেনে নিয়েছিল দামুকে। “আর একটু কাছে এলে কি জাত ..” কথাটা পুরো করতে পারার আগেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে দামুর শুকনো উদাস মুখের দিকে তাকিয়ে চুটকি বাজিয়ে বলল, “এ্যয়!”
শূন্য থেকে সম্বিত কেড়ে নিয়ে জবাব দিয়েছিল দামু, “ভয় লাগে – জাত তো যাবে তোমারই। লোকে কি আমাদের থাকতে দেবে? আমি দলিত আর –”
পূজার ফর্সা কোমল হাত দামুর শ্যমবর্ণ মুখে চাপা পড়েছিল। কথা কেড়ে নিয়েছিল সুন্দরী ব্রাহ্মনপুত্রী পূজা।
“ আমার দিব্যি, এমনটা কখনো বলো না। আমি যে ভালোবাসি – পেতে চাই তোমায় – হয় হোক দোষ আমার – কিছু যেয়ে আসে না।”
মনের গভীরে জুটানো একটুখানি খুশি ম্লান হাসি হয়ে দামুর মুখে ফুটে উঠেছিল। অনেক বারের মতো পূজা নিজের মনের মধ্যে ইচ্ছা জাগিয়ে আকাঙ্খার হাসি হেসে দামুর বুকের ওপর মাথা রেখে আত্মসমর্পণ করার উদ্রেক করেই ছিল এমন সময় কে যেন সিনেমা-ঘরের সামনের সারির তথাকথিত ম্লেচ্ছদের মতো সিটি বাজিয়ে দিতে দুজনেই একে অন্যকে আলাদা করে নিল। মেয়েদের সুপ্ত আবেগ যেমন বেশী প্রকাশ্য বিরোধও তেমনি। তাই পূজাই প্রথমে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। দামু দাঁড়াতে গিয়ে দেখল দুই বড়লোকের সরকারী জমিন দখলের ঝগড়াতে পতিত পড়ে থাকা পুকুর পাড়ে বড় হয়ে ওঠা কয়েকটা গাছের মধ্যে একটার পেছন থেকে বেরিয়ে এলো বিল্টন সিংহ আর অন্য দুটোর পেছন থেকে তার দুই সদাসঙ্গী চেলা – একটি গুন্ডা প্রকৃতির আর অন্যটি গুন্ডা ও হাস্য চরিত্রের সংমিশ্রণ।
স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিটি বাজিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বিল্টনের তির্যক তিরস্কার ভেসে এলো, “শালা, কতো ভাল রবিবাসরীয় শো খারাপ করে দিলি! ‘বুড়বক’ কোথাকার!”
পূজা নিজেকে সামলে নিলেও কি হবে তার চোখে মুখে আসন্ন বিপদের ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠল। দামুর একদিকে পূজার চিন্তায় বিমর্শ হওয়া সত্যেও অন্যদিকে বিল্টনকে দেখে তার গা রি-রি করে উঠল। আজ বুঝি এক হাত হয়ে যাবে। কিন্তু অপরাধবোধ তাকে যেন কেমন অসহায় করে দিল। সুযোগ বুঝে বিল্টন নিজের গুন্ডা চরিত্র ছেড়ে একটু রসিক হওয়ার চেষ্টা করে শ্লেষ-বাক্যবাণ ছুঁড়ে মারল, “কিরে – কেষ্টমহারাজ – কেলি করছিস নাকি – জবরদস্তি? ওই দ্যাখ – কেমন শুকিয়ে গেছে মেয়েটার মুখটা! আহা রে!” উক্তি শেষে কি এক কূট বুদ্ধিতে তার মুখে হাস্যরস দেখা দিল। গুন্ডাটাকে বলল, “ একে একটা চড় মার তো – ঠাস করে শব্দ হয় যেন। শালার মাথাটা ঠিক হয়ে যাবে। হাতেনাতে ধরা পড়েছে রে আজ কেষ্টমহারাজ। আবে, দেখছিস কি? মার না।”
মিশ্র-চরিত্রটি ভঙ্গী দেখিয়ে মালিকের হুকুম তামিল করার জন্যে সাথীকে মজবুত ইশারা করাতে গুন্ডাটি এগিয়ে গিয়ে হাত তুলে চড় কষতে গেলে দামু তার হাত ধরে ফেলল। গায়ে তার এরকম দুজনকে ধরাশায়ী করার জোর ছিল বটে কিন্তু এই মুহুর্তে সে আত্মরক্ষারই প্রয়াস করল মাত্র। বিল্টন এগিয়ে এসে তার স্পর্ধা কমাতে তার কাঁধে একটা ধাক্কা দিয়ে তাকে এক পা পিছিয়ে দিতে চেলা দুটির মুখে সন্তুষ্টির ঝলক দেখা দিল। উৎসাহের সাথে তাদের তাকিয়ে থাকাতে বিল্টন দামুকে আর এক ধাক্কা দিয়ে শ্লেষোচ্চারণ করল, “ কিরে – খুব যে চর্বি হয়েছে দেখছি?”
দামুর চোয়ালদুটো এবার শক্ত হয়ে উঠল। চোখদুটো রাগে যেন আগুণ। আর বোধহয় সামলানো যায় না। কিন্তু এবার বিল্টনের চেবানো বাক্যে ধমকানির আভাস হল। “ আবে চোখ দেখাচ্ছিস যে? শালা নিজের তো খুব চিন্তা রেখেছিস, একবার বাড়ীর চিন্তা তো কর। তোর মা গাঁ’য়ের যে পাঁচটা ঘরে কাজ করে না – ”
মায়ের কথা উঠতেই দামুর সমস্ত রাগ বিস্ময়ে পরিবর্তিত হল। জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকাতেই বিল্টন তার অর্ধকথিত বাক্য পুরো করে বলে চলল, “ – ওখান থেকে যদি কাজ ছাড়িয়ে দিই তাহলে তোর পঙ্গু পড়ে থাকা বাপের কি হবে রে? ভেবেছিস কখনো? তোর দিদি আর তুই দুজনে মিলে যা আয় করিস না তাতে তো তোদের ডাল-রুটিই পুরো হবে না, তার ওপর তোর বাপের ওষুধপত্র আসবে কোত্থেকে?”
দুই চেলা মালিকের এই দাম্ভিক বক্তৃতায় যৌথ ভাবে মাথা নেড়ে খুশি প্রকাশ করল। পূজার বিমর্ষ মূক শ্রোতা হওয়া ছাড়া এইমুহুর্তে বোধহয় অন্য কিছু করনীয় ছিল না। দামুর অন্তরাত্মা এবার তাকে মাথা নত করতে বাধ্য করালো। বিল্টন সমানে বলে চলল, “ বামন হয়ে চাঁদ ধরতে যেতে নেই। শালা, তুই কি তা জানিস না? ‘দলিত’ –তুই হচ্ছিস ‘দলিত’। বুঝলি? চল – চল – হাওয়া আসতে দে। এত সুখ কি তোদের জন্যে হয়? চল।”
দামুর চোখদুটো কেমন ছল ছল করে উঠেছিল। ঝাপসা চোখে পূজার দিকে তাকাতে সে দেখেছিল তার দু’গাল বেয়ে চোখের জল, কিন্তু সে নিশ্চুপ। প্রত্যক্ষ সহানুভূতির ক্ষীণ আশাটুকু তার মনের গভীরেই লীন হয়ে গিয়েছিল। মিশ্র চরিত্রটির বিদ্রূপাত্মক ইশারাতে ব্যথিত চিত্তে নিরুপায় হয়ে চলে যেতে যেতে তার কর্ণকুহরে বিল্টন সহ অন্য দু’জনের অট্টহাসি প্রবেশ করতে থাকল।
***
খালি গাছতলাটার থেকেও দামুর মনে হল তার বুকের ভেতরটা অনেক বেশি খালি। একটা কাক কাঁ-কাঁ করে হঠাৎই উড়ে গেল। ছলছলে চোখ নিয়ে বিল্টনের কালকের উক্তিটার একটা সৈদ্ধান্তিক রূপ নিজের মনেই গুন গুন করল দামু, “এত সুখ কি আমাদের জন্যে হয়?” তারপর এগোতে থাকল আনমনা হয়ে। কিন্তু কোথাও একবার যেন তার মনে হল পূজাকে ছেড়ে যাওয়াটা কি তার ঠিক হয়েছিল? পরক্ষনেই নিজেকে সমর্থন করার জন্যে মনে করল কিই বা করতে পারতো সে?
***
পূজা সকালের স্নান সেরে উঠোনে বাঁধা তারে ভেজা কাপড় শুকোতে দিচ্ছিল। মাথায় তোয়ালেটা এমন ভাবে বাঁধা যেন সদ্য স্নান শেষে কোন ফিল্মের মডেল। সূর্য্যদেবতাও নিজের ছটা দিয়ে যেন পূজার মুখে টুস-টুসে ব্রাহ্মণ তনয়ার মার্কা লাগিয়ে দিল। একরাশি এলো চুল ঝেড়ে বুকের ওপর ফেলে যেই তোয়ালেটা শুকোতে যাবে অমনি তার বুক ছ্যাঁত করে উঠল – মুখটা গেল শুকিয়ে। তোয়ালে আর কামিজের ফাঁক দিয়ে কাউকে যেন দেখল সে!
হ্যাঁ, আড়ষ্ট পায়ে দামু এগিয়ে আসছিল। ওটাই তো তার আসা যাওয়ার রাস্তা। সীমানার কাঁটা বেড়ার ফাঁক দিয়ে পথচারীদের বেশ চেনা যায়। ক্ষণকালের জন্যে দামু দাঁড়াল। চোখদুটো যেন তার আবার ঝাপসা হয়ে গেল। বুকের ভেতরের চিনচিনে ব্যথাটা বোধহয় আবার আওড়াতে যাচ্ছিল ‘এত সুখ কি …’ অমনি দামুর পা দু’টো শ্লথ গতিতে আবার এগোতে আরম্ভ করল।
কাল দামুর হাতে হাত মিলিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে না পারার লজ্জায় ও দুঃখে পূজার চোখে জল ভরে এলো। কিন্তু কিই বা করতে পারতো সে? শয়তান বিল্টন টা ওকে যে আরও অপমান করত। হয়তো নিজের ধমকানিটাকে সত্যে বদলে দিত সে। তাহলে কি হত দামুর? কিন্তু ছিঃ! শয়তানটা –
পূজার মনে পড়তে লাগল বিল্টন সিংহের নোংরামোভরা প্রতিটি ভ্রষ্ট পদক্ষেপ।
***
সজল চোখে দূরে চলে যাওয়া দামুর ছবি যখন পূজার চোখে অস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, তিনটে বজ্জাতের অট্টহাসি তখন তার কানের পর্দার ভেতরে গিয়ে মনের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা ভীতিরুপ দানবকে উৎসাহ দিচ্ছিল। পা’দুটো তার আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। হাসতে হাসতেই বিল্টনের ইশারাতে তার দুই চেলা দামুর পথের উল্টোদিকে চলে গিয়েছিল। বিল্টনের শ্লেষবাক্য এখনো সমাপ্তির ঘোষণা করল না।
“ আর – তুমি , আহারে! ঐ অস্তিত্বহীন অশিক্ষিত বর্বরের প্রেমে চোখের জল ভাসাচ্ছ? স্ট্রেঞ্জ!”
বড় শহরের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকায় পুরো না হলেও খণ্ডিত ভাবে বহুল প্রচলিত এক আধটা ইংরেজি শব্দ কখন কখন ছুঁড়ে মারতে অভ্যস্ত ছিল বিল্টন।
পূজা হিম্মত জুটিয়ে সামলে নিতে চাইল বটে কিন্তু চোখ তুলতেই বিল্টনের উদ্দেশ্য প্রণোদিত আঁতেলগিরি চলতে থাকল। “ — জানো কি হবে যদি গ্রামে জানাজানি হয়ে যায়? আরে, আজ এই –” অনেক পকেটওয়ালা ঢিলে জিনসের এক পকেট থেকে নিজের মোবাইল ফোনটা বার করে সমানে চালিয়ে গেল হাতের ইশারার সঙ্গে, “ – মোবাইল ফোন হয়েছে । কম্পিউটার চলছে। কিন্তু গ্রাম এখনও গ্রামই আছে। থু-থু করবে সব। আর তখন তোমার বিয়ে হওয়া তো দূরের কথা গ্রাম ছাড়তে হবে তোমার – বউ মরা – মাতাল বাপকে। হ্যাঁ, দ্যাট ইজ রাইট।” একটু আটকে গেলেও ‘বিপত্নীক’ শব্দটার সরল সমানার্থক পেয়ে সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে পারাতেই বোধহয় নিজের পূর্ব কথনের পুষ্টিতে তার ইংরেজি গৎটা বেরিয়ে গেল। পূজার হিম্মত আবার কোথায় হারিয়ে গেল।
“কিন্তু না,” পূজার হারানো হিম্মত যেন বিল্টনের মধ্যে এসে দু’গুণ হয়ে গেল। “ আমি তা হতে দেব না।” কুটিল হাসি তার মুখে। “আমি তোমাকে বাঁচাবো –” একটু এগিয়ে এসে পূজার একেবারে সামনে থেমে দ্বিত্ব করল, “ বাঁচাবো আমি তোমায়। দিন রাত যে তোমার কথা ভাবি। তার একটু তো ফল পেতে দাও।”
আঁতলামি শেষ হয়ে গিয়ে বিল্টনের ভাবাবেগে পরিবর্তন দেখে পূজা হক্চকিয়ে ভ্রুকুটি করল।
কামাসক্ত হয়ে উঠল বিল্টনের চোখদুটো আর খেই হারিয়ে গেল তার ‘তুমি’ – ‘তুই’ এর সম্বোধনের পার্থক্যের। “আমি যে তোকে চাই – ”
পূজা পালাবার জন্যে পা বাড়াতেই আবেগে পরিবর্তন আনার নিষ্ফল প্রচেষ্টায় বাক্য পূর্তি করল বিল্টন, “ – হ্যাঁ রে, এক বন্ধুর মতো করে। এক বার আমায় জড়িয়ে ধর না – এক বন্ধুর মতো – ” বাসনাতপ্ত চোখে, আড়ষ্ট জিভ আর কাঁপা-কাঁপা ঠোঁট দিয়ে ক্রমহ্রাসমান স্বরে কথাগুলো বলার সময় একবার এদিক ওদিক দেখে হঠাৎ, একেবারে হঠাৎই পূজাকে জড়িয়ে ধরে বিড়বিড়াতে লাগল সে, “ব্যস, আর কিছু চাই না – একবার – ”
পূজা জোর জুটিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে “ছেড়ে দে, ছাড় আমায় বলছি” বলল বটে কিন্তু বিল্টনের কানে কিছুই গেল না। দূর থেকে ভেসে আসা একটা সাইকেলের বেলের ‘ক্রিং-ক্রিং’ ও গেল না তার কানে। শুধু কাঁপা হাত শক্ত করে পূজার পিঠে ঘষতে ঘষতে ফট করে কামিজের জিপটা খুলে ফেলে হ্যাবলা হয়ে জড়ানো গলায় বলল ,“একবার – ব্যস একবার – আর কিছু চাই না রে।”